Thursday, March 5, 2015

পদার্থ ও প্রতি-পদার্থ, এবং রহস্যময় পদার্থবিজ্ঞান

বিজ্ঞান মানেই যুক্তিতর্ক, গবেষণা। আর গবেষণা মানেই রহস্য, সেই রহস্যের সমাধান, এবং তার চুলচেরা বিশ্লেষণ। আর বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সবচাইতে রহস্যময় বিজ্ঞান হচ্ছে পদার্থবিজ্ঞান। পদার্থবিজ্ঞানের অনেক রহস্য আজও অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
পদার্থবিজ্ঞানের যে বিষয়টি নিয়ে এখানে আলোচনা করা হচ্ছে, তা হল পদার্থ(Particle) এবং প্রতি-পদার্থ(Anti-Particle)। পদার্থবিজ্ঞানী পল ডিরাক ইলেক্ট্রনের জন্য কোয়ান্টাম মেকানিক্স ব্যবহার করতে গিয়ে সেখানে আইনস্টাইনের থিওরী অব রিলেটিভিটি ব্যবহার করে ১৯৩১ সালে সর্বপ্রথম ইলেক্ট্রনের প্রতি-পদার্থের অস্তিত্বের কথা ধারণা করেছিলেন। তিনি ইলেক্ট্রনের এ প্রতি-পদার্থের নাম দেন “পজিট্রন”। এবং এর পরের বছর ১৯৩২ সালে কার্ল এন্ডারসনপজিট্রন আবিষ্কার করেন, এবং পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে পল ডিরাকের অনুমানই সত্যি। ইলেক্ট্রন আর পজিট্রন পরস্পরের সংস্পর্শে আসা মাত্রই একে অপরকে ধ্বংস করে দেয় এবং তাদের সমস্ত ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। আর এই শক্তির পরিমাণ হচ্ছে E=mc^2।
আমরা জানি, আমাদের চারপাশের দৃশ্যমান জগৎ যা কিছু নিয়ে তৈরি, তার সবকিছুই সৃষ্টি হয়েছে ইলেক্ট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন দিয়ে। ইলেক্ট্রনের প্রতি পদার্থ যেমন পজিট্রন, ঠিক তেমনি প্রোটন এবং নিউট্রনেরও প্রতি পদার্থ রয়েছে, যাদের নাম যথাক্রমে এন্টি-প্রোটন এবং এন্টি-নিউট্রন। উল্লেখ্য, ইলেক্ট্রন মৌলিক কণা হলেও প্রোটন আর নিউট্রন কিন্তু মৌলিক কণা নয়। বিগব্যাং নামক যে মহাবিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছিল, সেই বিস্ফোরণের ফলে ১২ টি মৌলিক কণা ও তাদের প্রতি-কণা সৃষ্টি হয়েছিল। এই কণাগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়- কোয়ার্ক এবং লেপ্টন। ইলেক্ট্রন হচ্ছে লেপ্টন শ্রেণীভুক্ত। আর প্রোটন তৈরি হয় দুইটি আপ কোয়ার্ক এবং একটি ডাউন কোয়ার্ক নিয়ে। আবার নিউট্র্ন তৈরি হয় একটি আপ কোয়ার্ক এবং দুইটি ডাউন কোয়ার্ক নিয়ে। সুতরাং আমাদের দৃশ্যমান জগৎ সৃষ্টি হয়েছে তিনটি মৌলিক কণিকা ইলেক্ট্রন, আপ কোয়ার্ক এবং ডাউন কোয়ার্ক নিয়ে।
কিন্তু এখানে একটা খটকা থেকেই যাচ্ছে! যদি বিগ ব্যাঙ এর সময় এই ১২ টি মৌলিক কণিকা এবং একই সাথে তাদের প্রতি-কণা সৃষ্টি হয়ে থাকে, তবে তো ইলেক্ট্রন, আপ কোয়ার্ক এবং ডাউন কোয়ার্কেরও অবশ্যই প্রতি-কণা রয়েছে। আর তাদের সমন্বয়ে পৃথিবীতে উপস্থিত প্রতিটি পদার্থেরই প্রতি-পদার্থ সৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা জানি, পদার্থ এবং প্রতি পদার্থ পরস্পরের সংস্পর্শে আসা মাত্রই একে অপরকে ধ্বংস করে দিয়ে আইনস্টাইনের E=mc^2 সূত্র অনুযায়ী শক্তিতে পরিণত হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি যে পৃথিবী এখনো দিব্যি টিকে আছে! তবে কী সেই প্রতি-পদার্থগুলো এমন কোথাও আছে, যেখান থেকে তারা পদার্থকে প্রভাবিত করতে পারছে না? আমরা সমগ্র বিশ্বের শতকরা মাত্র ৪ ভাগ সম্বন্ধে জানি, সেই ৪ ভাগ হচ্ছে আমাদের দৃশ্যমান জগৎ। আর বাকি ৯৬ ভাগই আমাদের অজানা! এই ৯৬ ভাগ আমাদের দৃশ্যমান জগতের বহির্ভূত এক অজানা জগৎ। হয়ত প্রতি-পদার্থগুলো সেই অজানা জগতেরই কোনো এক কোণে আত্মগোপন করে রয়েছে!
প্রতি-পদার্থগুলোকে দৃশ্যমান জগতের বাইরে পাঠিয়ে দিলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার কোনো কারণ নেই। কেননা পদার্থবিজ্ঞানের জগতে খটকা এমন এক জিনিস যাকে সাময়িকভাবে ভুলে থাকা গেলেও পুরোপুরি ফেলে দেয়া যায় না। ফেলে দিলেও পরিত্রাণ নেই, পথ চলতে হলে তাকে আবার কুড়িয়ে নিয়ে আসতে হবে। বিগ ব্যাং এর আগে পৃথিবীতে কোনো পদার্থ ছিল না, ছিল শুধু শক্তি। আর সেই শক্তি পুন্ঞ্জীভূত হতে হতে এক পর্যায়ে ঘটে মহাবিস্ফোরণ বিগ ব্যাং, এবং এর ফলে সমপরিমাণ পদার্থ ও প্রতি-পদার্থ সৃষ্টি হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সমপরিমাণ পদার্থ এবং প্রতি-পদার্থ যদি একই সঙ্গে সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাহলে তো সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথেই আবার পরস্পরকে ধ্বংস করে দিয়ে পুনরায় শক্তিতে পরিণত হওয়ার কথা[এখানে লক্ষণীয়, পৃথিবীর সকল পদার্থ ও প্রতি-পদার্থ পরস্পরের সংস্পর্শে এসে একে অপরকে ধ্বংস করে দেয়ার পর যে শক্তি উৎপন্ন হবে, তার সর্বমোট পরিমাণ হবে বিগ ব্যাং এর পূর্বে যে পরিমাণ শক্তি ছিল তার সমান]! কিন্তু পৃথিবী তো কোটি কোটি বছর ধরে টিকে আছে!! তবে কী প্রতি-পদার্থের তুলনায় পদার্থ বেশি পরিমাণে সৃষ্টি হয়েছিল? তারপর সব পদার্থ এবং প্রতি-পদার্থ পরস্পরকে ধ্বংস করে দেয়ার পর বাড়তি পদার্থগুলো পৃথিবীতে রয়ে গেছে?? নাকি সৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতি-পদার্থগুলো কোনো এক অজানা জগতে চলে গেছে? কিন্তু কেন? কীভাবে??
সবকিছুর শেষে প্রশ্ন রয়েই যায়- কেন এবং কীভাবে?

Created by MB Reza

No comments:

Post a Comment

Pages

My photos

My photos

Followers